টেকনাফ প্রতিনিধি ::::
টেকনাফের প্রাইমারী স্কুলে বরাদ্দকৃত উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ১২ মাসের মোটা দাগের টাকা বিতরণের সুযোগে ব্যাংক নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাড়াহুড়া, ভীড়, মা অভিভাবকদের সরলতার সুযোগে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিভাবকগণ জানিয়েছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক অফিসার এবং টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুইজন শিক্ষা অফিসারই উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন।
জানা যায়, জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত এক বছরের জন্য উপজেলার ৫৫টি প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাসহ মোট ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ১২৫ টাকা। স্কুলওয়ারী বরাদ্দ হচ্ছে হোয়াইক্য সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৫০ টাকা, কাটাখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৫০ টাকা, কেরুনতলী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা, দৈংগাকাটা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৮১ হাজার ১০০ টাকা, কাঞ্জরপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা, ঝিমংখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা, নয়াবাজার সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৫০ টাকা, খারাংখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা, নাইক্ষ্যংখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, হ্নীলা আদর্শ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা, পানখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ১৫০ টাকা, উলুচামরী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ টাকা, রঙ্গীখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা, হ্নীলা বার্মিজ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা, লেদা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা, পল্লানপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭৫ টাকা, মহেশখালীয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৫ লক্ষ ৩ হাজার ৫০ টাকা, লেঙ্গুরবিল সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা, লম্বরী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৫০ টাকা, রাজারছড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা, সাবরাং সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৫০ টাকা, মুন্ডারডেইল সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৯ হাজার ৬০০ টাকা, নোয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫০ টাকা, শাহপরীরদ্বীপ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা, শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৫০ টাকা, জিনজিরা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ২০০ টাকা, শামলাপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ টাকা, উত্তর শীলখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ১০০ টাকা, দক্ষিণ শীলখালী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০ টাকা, বড়ডেইল সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩৪ হাজার ৭৫০ টাকা, জাহাজপুরা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা, দক্ষিণ বড়ডেইল সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৫০ টাকা, শাহপরীরদ্বীপ মাঝেরপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ১০০ টাকা, জাদীমুরা এমআর সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা, বড় হাবিবপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৫০ টাকা, শাহপরীরদ্বীপ উত্তরপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ২০০ টাকা, কাটাবনিয়া-কচুবনিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকা, লাতুরীখোলা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৭০০ টাকা, হরিখোলা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৮২ হাজার ৫০০ টাকা, হাজামপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা, মহেশখালীয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২০০ টাকা, ডাঙ্গারপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ টাকা, সাবরাং কমিউনিটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৭০০ টাকা, উলুবনিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, হামিদিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৮০০ টাকা, হাবিরছড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা, উঞ্চিপ্রাং সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা, রোজারঘুনা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৭৫০ টাকা, চান্দলীপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা, আলী আকবরপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৫০ টাকা, নোয়াখালীয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা, সুফিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৬৫০ টাকা, নয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪৫০ টাকা, হাজী মোহাম্মদ হোছন সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৩ লক্ষ ৪ হাজার ২০০ টাকা, জব্বারিয়া শাহীন শরীফ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা, নয়াপাড়া সিরাজুল উলুম ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬০০ টাকা, মুন্ডারডেইল ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৮০০ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে বিতরণে নিয়োজিত ব্যাংকের লোকজন কার্ডে উল্লেখিত প্রদত্ত টাকার পুরো অংশ অভিভাবকদের না দিয়ে কিছু অংশ ভাংতি নেই বলে এবং বিভিন্ন অজুহাতে কৌশলে আত্মসাৎ করেছেন। স্কুল কমিটির অনেকে তাড়াহুড়া এবং ভিড়ের মধ্যে বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। হ্নীলা রঙ্গীখালী গ্রামের খদিজা বেগম নামের এক অভিভাবক ক্ষোভের সাথে বলেন স্কুলের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের টাকা খাওয়ার জন্য তাঁদের কি যে লোভ। আমার বাচ্চার কার্ডে ১ হাজার ৫০ টাকার পরিবর্তে তাড়াহুড়া করে আমাকে ৫৫০ টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে বিতরণকারী লোকজন আরো বকাঝকা করে চলে যেতে বলেন। পরে মাষ্টার আনোয়ারকে ডেকে আনলে বাকী ৫০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। রঙ্গিখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান ব্যাংকের লোকজন অভিভাবককে টাকা কম দিয়েছে বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক কার্ড খুঁজে বের করে বাদ বাকী টাকা উক্ত অভিভাবককের হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি ছাড়া আরো অনেকে অনাকাংখিত এমন অবস্থার শিকার হয়েছেন বলে উক্ত শিক্ষক জানিয়েছেন। শবে মেরাজ নামে এক মহিলা অভিভাবক বলেন, আমাকে ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা দিয়েছে। লায়লা বেগম নামের অপর এক অভিভাবক বলেন ছেলে-মেয়ে দু’জনের প্রাপ্য ১ হাজার ৮০০ টাকার পরিবর্তে আমাকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দেন। তাড়াহুড়া করে বাকী ৫০০ টাকা দেননি। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা কম দেওয়ার কথা অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায় উপজেলার ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাসহ মোট ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের অনুমোদন না থাকায় ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিধিমতে পৌরসভার ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৬টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পায়নি। জনতা ব্যাংক টেকনাফ শাখাকে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৫ সনের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এবং ২০১৬ সনের জানুয়ারী থেকে জুন মাসসহ ১২ মাসের উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ১ম কিস্তিতে ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ১১ হাজার ৯৭৩ জন উপকারভোগী শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণযোগ্য টাকার পরিমাণ ছিল ৩২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৫০ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ২৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯২৫ টাকা। অব্যয়িত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৭২৫ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ২য় কিস্তিতে ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ১২ হাজার ১৬১ জন উপকারভোগী শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণযোগ্য টাকার পরিমাণ ছিল ৩১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৫০ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ২৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ১২৫ টাকা। অব্যয়িত টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ৩য় কিস্তিতে ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ১২ হাজার ২৩৬ জন উপকারভোগী শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণযোগ্য টাকার পরিমাণ ছিল ৩৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৭৫ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৩২ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৭৫ টাকা। অব্যয়িত টাকার পরিমাণ ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ৪র্থ কিস্তিতে ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ১২ হাজার ১৯২ জন উপকারভোগী শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণযোগ্য টাকার পরিমাণ ছিল ৩৬ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৭৫ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৩১ লক্ষ ৭১ হাজার ২০০ টাকা। অব্যয়িত টাকার পরিমাণ ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকা।
সুযোগ বুঝে অভিভাবকদের হাতে টাকা কম দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে নিয়োজিত টেকনাফ জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা রিটন চাকমা বলেন ভুলক্রমে কম দেওয়া হলে পরে ডেকে এনে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর এবং সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ বোস জানান, উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়ম হয়নি। যার বড় প্রমাণ হচ্ছে সরকারী বরাদ্দের বড় ধরণের একটি অংশ ব্যয় হয়নি। অব্যয়িত অংকের পরিমাণ ২০ লক্ষ ২৯ হাজার ৮২৫ টাকা। ব্যাংক অফিসার, শিক্ষা অফিসার, স্কুলের শিক্ষক দুর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিলে উক্ত পরিমাণ টাকা কোন অবস্থাতেই অব্যয়িত থাকতনা। মাত্র ২টি প্রতিষ্টান ছাড়া মঞ্জুরীপ্রাপ্ত প্রত্যেক স্কুল থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা ফেরৎ গেছে। জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জোবায়ের হোসাইন উপবৃত্তির টাকা বিতরণের সময় প্রত্যেক কেন্দ্রে ব্যাংক অফিসার ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসার, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ এবং স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত থাকেন। এতে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।
পাঠকের মতামত: